গণহত্যা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় এক দিনেই কমপক্ষে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত
-
আপলোড সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ১০:২৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
-
আপডেট সময় :
২৯-০৬-২০২৫ ১০:২৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
আপনজন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গাজাবাসী । ছবি- বিবিসি
গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত চার শতাধিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার দুপুরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু এবং প্রায় সব হামলাই হয়েছে বেসামরিক এলাকাগুলোতে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজা নগরের একটি স্টেডিয়ামের কাছে, যেখানে বহু উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছিলেন, সেখানে বিমান থেকে বোমা ফেলে অন্তত ১১ জনকে হত্যা করা হয়। আল-শিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে। এই হামলার পরপরই চারদিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি এবং কান্নার রোল পড়ে যায়। হামলার পরপরই হতাহতদের খুঁজতে স্থানীয় মানুষজন খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে থাকেন।
আহমেদ কিশাউই নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এখানে তো কোনো সন্ত্রাসী ছিল না, শুধু সাধারণ মানুষ আর শিশু। অথচ কোনো রকমের দয়া না দেখিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি জানান, বিস্ফোরণে তাঁবুগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
একই দিন গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায়ও আবাসিক ভবন ও অস্থায়ী তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলায় নিহত হন আরও অন্তত ১৪ জন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা জানান, হামলার সময় তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন। সৌদ আবু তেইমা নামের এক বৃদ্ধা বলেন, এই শিশুরা তাদের কী ক্ষতি করেছিল? কেন তাদের প্রাণ গেল?
এছাড়া গাজার জাফা স্কুলের অদূরে তুফাহ নামের এক এলাকায় আবারও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের ওপর ফেলা হয় বোমা, যাতে পাঁচ শিশুসহ নিহত হন অন্তত আটজন।
মোহাম্মদ হাবিব নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই হামলায় আমার বাবা, ভাতিজা ও প্রতিবেশী কয়েকটি শিশু নিহত হয়েছে। আমরা তো কিছুই করিনি, তাহলে আমাদের ওপর এই বর্বরতা কেন?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে হারেৎজ পত্রিকার এক অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদনে এই সংখ্যা এক লাখেরও বেশি বলে দাবি করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতিবিদ মাইকেল স্পাগাট পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
চলমান এই সহিংসতায় আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মতে, এ হামলা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নয়, বরং এটি একটি ধারাবাহিক জাতিগত নির্মূলের অংশ। গাজায় সাধারণ মানুষের এই বিপর্যয় এখন বিশ্ব বিবেকের বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি
নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক
কমেন্ট বক্স