'কবর খুঁড়েছি আল্লাহর জন্য'
কিশোরগঞ্জের সেই মনু মিয়া আর নেই
-
আপলোড সময় :
২৮-০৬-২০২৫ ০৩:১১:৫৪ অপরাহ্ন
-
আপডেট সময় :
২৮-০৬-২০২৫ ০৩:১১:৫৪ অপরাহ্ন
প্রিয় ঘোড়ার সাথে মনু মিয়া। ছবি- ফেসবুক
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, মানুষের কাছে 'শেষ ঠিকানার কারিগর' হিসেবে পরিচিত মো. মনু মিয়া (৬৭) আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে মনু মিয়া নিঃস্বার্থভাবে কবর খননের কাজ করে গেছেন। জীবনের এই মহৎ কাজের বিনিময়ে তিনি কখনো কারো কাছ থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি। আশেপাশের গ্রাম থেকে শুরু করে পুরো জেলাজুড়েই তিনি একজন সেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর।
নিঃস্বার্থ সেবার এক ব্যতিক্রমী জীবন
মনু মিয়া কেবল কবর খননই করতেন না, বরং কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর পেলেই খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। দূর-দূরান্তের কবর খনন করতে তার একমাত্র সঙ্গী ছিল একটি লাল রঙের ঘোড়া। বহু বছর আগে নিজের দোকান বিক্রি করে তিনি এই ঘোড়াটি কিনেছিলেন।
তবে কিছুদিন আগে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গেলে এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা তার সেই প্রিয় ঘোড়াটিকে নির্মমভাবে মেরে ফেলে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ঘোড়ার এই আকস্মিক মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পড়েন। যদিও চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন, কিন্তু আর আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
জীবদ্দশায় মনু মিয়া ৩ হাজারেরও বেশি কবর খনন করেছেন। কোনো পরিবার থেকেই তিনি কখনোই পারিশ্রমিক বা বকশিশ গ্রহণ করেননি। তিনি বলতেন, তার এই কাজ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এই নিঃস্বার্থ সেবার কারণে এলাকার মানুষ তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতেন।
ঢাকার আইনজীবী ও এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় তিনি মনু মিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেসময় অনেকেই তাকে নতুন ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মনু মিয়া বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন—‘আমি এই কাজ করি আল্লাহকে খুশি করতে। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।’
মনু মিয়ার মৃত্যুর খবরটি অভিনেতা খায়রুল বাসারের একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মনু মিয়ার সঙ্গে দুটি ছবি প্রকাশ করে তিনি লেখেন, “মনু কাকা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
তিনি আরও লিখেছেন—“এতদিন ঢাকায় ছিলেন। তিন দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। বলেছিলেন আগের চেয়ে বেশ সুস্থ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা আল্লাহ কবুল করেছেন। সুস্থ থাকতেই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে চেয়েছিলেন। হয়তো নিজের জন্মভূমি থেকেই আল্লাহ তাকে ডেকে নিয়েছেন। তার মহৎ কর্মের বিনিময়ে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে জান্নাতের পুরস্কার দেবেন। সবাই মনু কাকার জন্য দোয়া করবেন।”
মনু মিয়া চলে গেলেন, কিন্তু মানুষের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সেবা আর মহৎ কর্মের স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক
কমেন্ট বক্স