, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ক্রিকেট

টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছাড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত

  • আপলোড সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০১:০১:১৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০১:০২:৪৬ অপরাহ্ন
টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছাড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি-- ফেসবুক

কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সংবাদ সম্মেলনের একদম শেষে নাটকীয়ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখলেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে ধারণা করা গিয়েছিল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে হয়তো তিনি বিশ্রাম নিতে চান বা হয়তো আরেকটি সফরের কথা ঘোষণা করবেন। কিন্তু তা না করে তিনি বললেন, “আমার একটা ঘোষণা আছে”—এই ঘোষণার মাধ্যমেই জানালেন, তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে আর থাকছেন না।

শান্তর এমন ঘোষণার আগাম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। বিশেষ করে তাঁকে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই অনুমান করেছিলেন, হয়তো তিনি নিজের সিদ্ধান্তে টেস্ট নেতৃত্ব থেকেও সরে যাবেন। অবশেষে তা-ই হলো। ২৮ জুন শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে শান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন, তিনি আর বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চান না।

সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি টেস্ট সংস্করণে আর এই দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি সবাইকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি মনে করি, এটাতে দলের ভালো কিছুই হবে। এই ড্রেসিংরুমে কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিনজন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, আমি আশা করব, কেউ যেন এ রকম না মনে করে যে আমি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা রাগ থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এটা আমি নিশ্চিত করলাম এটা দলের ভালোর জন্য, এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই।

নাজমুল শান্ত এই সিদ্ধান্তের কথা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। যদিও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনাপ্রধান নাজমূল আবেদীন দাবি করেছেন, “না, এ রকম কোনো কথা হয়নি।” জানা গেছে, নাজমূল আবেদীন গতকাল সন্ধ্যায় কলম্বোয় এসে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নাজমুল শান্তকে তিন সংস্করণের অধিনায়ক ঘোষণা করে বিসিবি। এটি ছিল একটি বড় সিদ্ধান্ত। বিসিবি মনে করেছিল, একজন নেতৃত্বদানের জন্য পরিণত ব্যাটসম্যান হিসেবে শান্ত দেশের ক্রিকেটকে নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। শুরুতে তেমন প্রতিচ্ছবিও দেখা গিয়েছিল। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের সময় শান্ত দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে তোলেন। কোচিং স্টাফের সঙ্গে তার আন্তরিক সম্পর্কও আলোচনায় আসে।

কিন্তু ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে থাকে। ব্যাট হাতে শান্ত নিজের ফর্ম হারাতে থাকেন। এরপর বিসিবি ধাপে ধাপে নেতৃত্ব ভাগ করে দেয়। প্রথমে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হয় লিটন দাসকে। শান্ত তখন স্বেচ্ছায় সে দায়িত্ব ছাড়েন। পরে ওয়ানডে অধিনায়কত্বও তাঁর হাত থেকে চলে যায়। গত ১২ জুন বিসিবি এক ঘোষণায় জানায়, ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর ফলে শান্ত শুধু টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবেই থেকে যান—যা ছিল আগাম সংকেত।

এই পরিস্থিতিতে দলের ভেতরে এবং বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন শান্ত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগে কখনো তিন সংস্করণে তিনজন আলাদা অধিনায়ক দেখা যায়নি। শান্ত নিজেও তিন সংস্করণে তিনজন অধিনায়কের পক্ষে ছিলেন না, বরং শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, একজন নেতার অধীনেই সবার চলা উচিত।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন পথে মোড় নেয়। নেতৃত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গে শান্তর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও সমালোচিত হতে থাকে। কলম্বো টেস্টে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তিনি কিছুটা চাপেই ছিলেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য স্পষ্ট—এই সিদ্ধান্ত তিনি আবেগ বা হতাশা থেকে নেননি, বরং দলের সামগ্রিক মঙ্গল ভেবেই এই পথ বেছে নিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, শান্তর বিকল্প হিসেবে কে হবেন বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়ক? বিসিবি এই বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি। অনেকের মতে, লিটন দাস বা মেহেদী হাসান মিরাজ হতে পারেন বিকল্প, আবার নতুন কাউকে নিয়ে ভাবতেও পারে বোর্ড। তবে এ বিষয়ে বিসিবি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দেওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, শান্তর এই সিদ্ধান্ত দলের ভেতরের নেতৃত্বগত বিভ্রান্তির ইঙ্গিতই দেয়। একজন খেলোয়াড় যখন এক বছরে তিনটি অধিনায়কত্ব পায়, আবার এক বছরে দুটি হারিয়ে ফেলে, তখন বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া এবং স্থিরতার ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

শান্ত বলেন, আমি এখনো দলের সঙ্গে থাকব। নিজের দায়িত্ব পালন করব একজন ব্যাটার হিসেবে। তবে নেতৃত্ব থেকে সরে গিয়ে দলের সামগ্রিক পরিবেশে হয়তো আরও গতি আসবে। আমার বিশ্বাস, যারা দায়িত্বে আসবেন তারা দলের জন্য ভালো করবেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক নেতৃত্ব সংকটে শান্তর এই বিদায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এখন অপেক্ষা নতুন নেতৃত্বের জন্য—যে নেতৃত্ব ভবিষ্যতের টেস্ট দলের জন্য নির্ভরতা হয়ে উঠতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা

​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা