‘বিডিআর’ নাম পুনঃস্থাপনসহ
তিন দফা দাবিতে বিডিআর সদস্যদের আন্দোলন
-
আপলোড সময় :
২৩-০৬-২০২৫ ০৫:৪৫:৩২ অপরাহ্ন
-
আপডেট সময় :
২৩-০৬-২০২৫ ০৫:৫১:১৫ অপরাহ্ন
শাহবাগে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের অবরোধ | ছবি- মেহেদি হাসান
সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫। আজ সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর বরখাস্ত সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং পুনর্বিবেচনার দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে সাবেক বিডিআর কর্মকর্তা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের শুরুতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান, যার ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে তারা তাদের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো:
১. পুনর্বহাল ও ক্ষতিপূরণ: পিলখানাসহ সারা দেশের বিডিআর ইউনিটগুলোতে বিশেষ আদালত ও মহাপরিচালক এবং অধিনায়কের সামারি কোর্টের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত (৭৬ ব্যাচসহ) সব বিডিআর সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাসহ পূর্ণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্বাধীন তদন্ত ও নিরপরাধের মুক্তি: পিলখানা হত্যাকাণ্ডে গঠিত শর্তযুক্ত তদন্ত কমিশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত কমিশনে রূপান্তর করতে হবে। এর প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত "ব্যতীত" শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) ধারা বাতিল করে কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে, যাতে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রায় ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
৩. সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন ও 'বিডিআর' নাম পুনঃস্থাপন: ২০০৯ সালের পিলখানা ঘটনার আলোকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ন্যায়পরায়ণ ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের সবাইকে পুনর্বাসন করতে হবে। একই সাথে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী "বাংলাদেশ রাইফেলস" তথা "বিডিআর" নামটি পুনঃস্থাপন করতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার। তিনি বলেন, "সরকার এই দীর্ঘ সময়েও কেন এই মামলায় কোনো স্বচ্ছ ও সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান দিতে পারেনি, তা জাতির কাছে প্রশ্ন। আমরা জানতে চাই, কোন আন্তর্জাতিক চাপে সরকার নীরব?" তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "এই বিষয়টি মানবিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার।"
সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে আন্দোলনকারীরা 'মার্চ ফর যমুনা' নামে একটি পদযাত্রা শুরু করেন। স্লোগানে মুখর হয়ে তারা যমুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেও শাহবাগ এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। পুলিশের প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেলেও শাহবাগ মোড়ে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মুখে তারা আর এগোতে পারেননি। সেখানে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হলেও, পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আন্দোলনকারীরা সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারীরা সেখানে দাঁড়িয়ে সরকারের নীতির প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এই কর্মসূচিকে ঘিরে এখনো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে এবং আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক
কমেন্ট বক্স