মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যেই ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় ফিরবে না। জেনেভায় ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই কড়া বার্তা দেন।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংঘাত দীর্ঘ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরও ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল 'প্রলম্বিত অভিযানের' জন্য প্রস্তুত। জামিরের এই হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের পক্ষ থেকে এমন কঠোর প্রতিক্রিয়া এল।
আরাগচি জোর দিয়ে বলেন, "ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের সুরক্ষিত। আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কোনো আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।" তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, "ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হলে আমরা কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরব না।"
আন্তর্জাতিক চাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
বর্তমানে চলমান সংঘাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—তেহরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারট মন্তব্য করেছেন, "ইরান যেন হামলার বিরতির জন্য অপেক্ষা না করে আলোচনা শুরু করে। সামরিক উপায়ে এর সমাধান নাও হতে পারে।"
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ইরানকে আলোচনায় ফেরার জন্য ১৪ দিনের সময় দিয়েছেন, যদিও তিনি সময়সীমার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো, "দেখা তাদের হুঁশ ফেরে কি না।"
তবে আরাগচির ইউরোপ সফর নিয়ে কটাক্ষ করে ট্রাম্প বলেন, "ইরান ইউরোপের সঙ্গে নয়, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। ইউরোপ এই বিষয়ে কোনো সহায়তা করতে পারবে না।"
চলমান সংঘাত ও হতাহতের চিত্র
সংঘর্ষের এই প্রেক্ষাপটে ইরান গত শুক্রবার ইসরায়েলের হাইফা শহরের দিকে অন্তত বিশটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই হামলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে, ফলে ইসরায়েলে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫-এ পৌঁছেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ) পাল্টা হামলায় ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র মজুদাগার ও উৎক্ষেপণস্থলে আঘাত হানার কথা জানিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের সামরিক স্থাপনা ও অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করেছে এবং হামলায় বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত ২২২ জন নিহত হয়েছে। তবে একটি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, এই সংখ্যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৩৯-এ পৌঁছেছে।
অচলাবস্থা ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং দুই দেশই ক্রমশ সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ছে, কিন্তু ইসরায়েল ও ইরানের একে অপরের প্রতি দোষারোপ এবং পাল্টা হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অচলাবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর শঙ্কা তৈরি করেছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা