, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট স্যাটেলাইট এখন চীনের

  • আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৫:২৮:১১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৫:২৮:১১ অপরাহ্ন
বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট স্যাটেলাইট এখন চীনের ছবি- সংগৃহীত

বিশ্ব প্রযুক্তির দৌড়ে এবার চীন যেন এক লাফে অনেকটা এগিয়ে গেল। ইলন মাস্কের বহুল আলোচিত স্টারলিংক প্রযুক্তিকে পেছনে ফেলে আরও উন্নত, আরও দ্রুতগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে দেশটি। চীনের বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই নতুন প্রযুক্তির ইন্টারনেট গতি স্টারলিংকের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি এবং এটি বিশ্বের যেকোনো স্থানেই নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য উচ্চগতির কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে পারবে।
 

চীনা গণমাধ্যম প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি জিওস্টেশনারি কক্ষপথের স্যাটেলাইট থেকে, যেখানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত অবস্থান করে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়। উচ্চতার এই পার্থক্য শুধু ভৌগোলিক নয়, প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিক থেকেও বিপুল পার্থক্য তৈরি করেছে।
 

গবেষকরা জানিয়েছেন, এত উচ্চতায় সিগন্যাল পাঠানো গ্রহণ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত লেজার সিগন্যাল যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করে, তখন তা বিকৃত হয়ে পড়ে এবং ইন্টারনেট সংযোগে জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু চীনের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে। এতে রয়েছে ৩৫৭টি মাইক্রো-মিররের সমন্বয়ে তৈরি একটি অনন্যতর ব্যবস্থা, যা বিকৃত সিগন্যালকে পুনর্গঠন করে দ্রুত নির্ভুলভাবে ডেটা প্রেরণ করে।
 

এছাড়াও ব্যবহৃত হয়েছে মাল্টি-প্লেন লাইট কনভার্টার এবং অত্যাধুনিকরিয়েল-টাইম পাথ-পিকিং অ্যালগরিদম’, যা সিগন্যাল ট্রান্সমিশনের সময় প্রতিটি তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ কার্যকর পথ নির্ধারণ করে। এর ফলে ডেটা ট্রান্সফারে ল্যাগ, সিগন্যাল লস বা বিঘ্নিত সংযোগের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
 

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা এবং সামরিক মহাকাশ প্রকল্পের সহায়তায় পরিচালিত এই গবেষণা শুধু চীনের ইন্টারনেট সক্ষমতাই নয়, বরং বৈশ্বিক স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড দুনিয়ায় এক নতুন বিপ্লবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি উন্নয়নশীল দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে, জলবায়ু পর্যবেক্ষণ, মহাকাশ গবেষণা, রিমোট সেন্সিং এবং সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমেও এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
 

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টারলিংক যেখানে একাধিক নিম্ন কক্ষপথের স্যাটেলাইট দিয়ে ইন্টারনেট কাভারেজ দেয়, সেখানে চীনের নতুন প্রযুক্তি একটি মাত্র উচ্চ কক্ষপথ স্যাটেলাইট থেকেই অনেক বেশি বিস্তৃত স্থিতিশীল পরিষেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে। এটি স্টারলিংকের মতো মেগা-কনস্টেলেশন নির্ভরতার বাইরে গিয়ে নতুন ধরনের প্রযুক্তি বাস্তবায়নের নজির গড়েছে।
 

বিশ্বের বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি শুধুমাত্র প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা নয়, বরং তথ্য নিরাপত্তা, মহাকাশ-প্রভাব বিস্তার বাণিজ্যিক আধিপত্য অর্জনের দিক থেকেও একটি কৌশলগত বিজয় বলেই অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা।
 

এই অর্জন ইলন মাস্কের স্টারলিংকের ভবিষ্যৎ অবস্থান বাজার দখল ক্ষমতার ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমা টেলিকম উদ্যোক্তারা। বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহে যে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হলো, তা প্রযুক্তির গতিপথ যেমন বদলাবে, তেমনি গ্লোবাল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ভূরাজনীতিতেও নতুন চাপ তৈরি করবে।
 

তথ্যসূত্র: চায়না ডেইলি, গ্লোবাল টাইমস, আল জাজিরা


নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা

​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা