, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সামরিক কৌশল

  • আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৪:২৩:৪২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ০৪:২৩:৪২ অপরাহ্ন
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সামরিক কৌশল ছবি- সংগৃহীত
 
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানে হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ৫৮৫ এবং আহত ১,৩২৬ জন। এর মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১২৬ জন নিরাপত্তা সদস্য রয়েছেন। এটি একটি সুপরিকল্পিত সামরিক হামলা ছিল, যেখানে ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডের অন্তত দুই ডজন শীর্ষ কর্মকর্তাও লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সোমবারের তথ্য অনুসারে, তখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা ছিল ২২২ জন ও আহত ১,২৭৭ জন। এতে স্পষ্ট যে, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
 
কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু ও মানবিক বিপর্যয়
 
হামলাগুলো কেবল সামরিক স্থাপনা নয়, ইরানের পারমাণবিক কাঠামোর কেন্দ্রগুলোকেও লক্ষ্য করেছে। ফোর্ডো ইউরেনিয়াম উৎপাদন কেন্দ্র এবং দেশের শীর্ষ গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে।
তবে এই সংঘাত কেবল কৌশলগত গভীরতা নয়, এক মানবিক বিপর্যয়ও বটে। ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ১৪০ জন ইরানি গৃহহীন হয়েছেন। সরকারি ভবন, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
 
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
 
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নতুন রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাহরাইন ও কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে দুর্বল স্থাপনাগুলো সরাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ইউএসএস কার্ল ভিনসন যুক্তরাজ্যের লেকেনহিথ ঘাঁটি থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং ইউএসএস নিমিৎজ ও ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডের মতো বেশ কয়েকটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হচ্ছে।

আকাশেও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ (F-22), এফ-৩৫ (F-35) এবং এফ-১৬ (F-16) যুদ্ধবিমানসহ অন্তত ৩০টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে অবতরণ করছে।

পেন্টাগন জানিয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো আপাতত 'রক্ষণাত্মক' এবং এর মূল লক্ষ্য মার্কিন সৈন্য ও সরঞ্জাম সুরক্ষা। তবে একই সাথে এগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বড় ধরনের সামরিক মিশনে জড়িত হতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি এখনও চূড়ান্তভাবে 'হ্যাঁ' বা 'না' বলেননি, তবে ইরানকে 'শর্তবিহীন আত্মসমর্পণ' করার দাবি করেছেন। এই বক্তব্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কৌশলে বা সরাসরি এই সংঘাতে যুক্ত হতে পারে।
 
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তার কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছেন। তিনি 'অপূরণীয় ক্ষতির' হুমকি দিয়ে বলেছেন, কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মধ্যপন্থী সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে। ইউরোপীয় কূটনীতি সক্রিয় রয়েছে এবং জেনেভায় আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কেমন হবে, তা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে যে, তারা ইরানে আক্রমণের পরিকল্পনা করেনি, তবে ড্রোন ও রকেট প্রতিরক্ষায় তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মিসাইল প্রতিরক্ষা একটি বড় সংকট। ইসরায়েলের অ্যারো (Arrow) সিস্টেমের কার্যকারিতা উদ্বেগজনক মাত্রায় কমে এসেছে এবং পেন্টাগন পূর্বাঞ্চলে বিরোধ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপের চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সবাই সংঘাত কমানোর প্রস্তাব করছে এবং যুদ্ধবিরতি চাইছে। তবে এলোমেলো আক্রমণ-প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমশ বড় উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে।

এই মুহূর্তে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামোর এক কঠিন পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র কেবল প্রতিরক্ষামূলক আচরণে সীমাবদ্ধ না থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কৌশলগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে। যদিও তারা এখনও পূর্ণাঙ্গ হস্তক্ষেপে যায়নি, তবে এই সংঘাতের মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবন ও আধুনিক অবকাঠামোর সুরক্ষা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কূটনীতির টানাপোড়েন কোনো সহজ পথ দেখাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্য এখন 'তীব্র অনিশ্চয়তার হ্রদ', যেখানে সামরিক শক্তি, কূটনৈতিক কৌশল ও আন্তর্জাতিক চাপ—সবই একসাথে ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে।
 
সূত্র: এএফপি

নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা

​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা