ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ ও ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচিত খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত আলোচিত কিশোর আবদুল্লাহ সিদ্দিক হত্যা মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগের একটি চৌকস দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করে।
সিআইডির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদের একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে হঠাৎ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ১৭ বছর বয়সী কিশোর আবদুল্লাহ সিদ্দিক, যিনি তখন দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের একটি সাংস্কৃতিক ইউনিটের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সেদিনের সংঘর্ষে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তাদের তালিকায় উঠে আসে খোরশেদ আলমের নাম, যিনি শুধু তাপসের ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ হিসেবেই নন, বরং দক্ষিণ নগরীর একাধিক আলোচিত প্রকল্প ও ঠিকাদারি বণ্টন ঘিরে ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর প্রভাবেই বিভিন্ন আন্দোলনকারীর ওপর হামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগের পরিদর্শক ফজলুল হক খান এই মামলার তদন্ত করছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই খোরশেদ আলম নজরদারিতে ছিলেন, তবে তার অবস্থান পরিবর্তন, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার এবং প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত সপ্তাহে পাওয়া কিছু নতুন তথ্য ও প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, খোরশেদ আলমের মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে, যেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে বলে দাবি তাঁদের।
এদিকে খোরশেদ আলমের গ্রেপ্তার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাপসপন্থী একাধিক নেতাকর্মী দাবি করেছেন, এটি একটি ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’, যেখানে প্রশাসন নিরপেক্ষতা হারিয়ে নির্দিষ্ট মহলের চাপ মেনে চলেছে।
এদিকে নিহত কিশোর আবদুল্লাহ সিদ্দিকের পরিবার জানান, তাঁরা বহুদিন ধরে খোরশেদের গ্রেপ্তার দাবি করে আসছিলেন। গত বছর বেশ কয়েকবার তাঁরা গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার দ্বারস্থ হন। আবদুল্লাহর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আজও ছেলের জামাটা ধোয়া হয়নি, আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই। যারা ওকে খুন করেছিল, তাদের সবার বিচার চাই।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক