ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে সোনিপাতের একটি শান্ত খাল হঠাৎই রক্তাক্ত ট্র্যাজেডির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেখান থেকে গতকাল সোমবার উদ্ধার করা হয় তরুণী মডেল শীতল চৌধুরীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। রোমাঞ্চকর বিনোদন জগতের এই উঠতি মুখের হঠাৎ করেই মৃত্যু নয়, ছিল নির্মম, নৃশংস এবং প্রতারণার পরিণতি। ঘটনায় জড়িত প্রেমিক সুনীলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ফেলে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়—সুনীল নিজেই স্বীকার করেছেন শীতলকে হত্যা করে তাঁর মরদেহ একটি গাড়ির ভেতরে রেখে খালে ফেলে দেন তিনি।
হরিয়ানার পানিপাত জেলার খারখোদা থানার অধীনে থাকা রিলায়েন্স খালের পাশের গ্রামগুলো গত কয়েক দিন ধরেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। গত শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন মডেল শীতল চৌধুরী। পুলিশ জানায়, ওই দিন তিনি একটি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের কাজে আহার গ্রামে যান। সেখানেই রাত সাড়ে দশটার দিকে তাঁর কথিত প্রেমিক সুনীল পৌঁছান। তাঁদের সম্পর্ক ছয় বছরের পুরনো হলেও, সেই সম্পর্ক যে এমন ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে, তা কে জানত?
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সুনীল শীতলকে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে নেন। এরপর কিছুক্ষণ গাড়িতে সময় কাটান দুজন। একপর্যায়ে তাঁরা কোনো একটি বিষয়ে তর্কে জড়ান। তর্ক দ্রুত পরিণত হয় উত্তেজনাপূর্ণ বচসায়, যা পরে রূপ নেয় শারীরিক নির্যাতনে। সুনীল একপর্যায়ে তাঁর ওপর চড়াও হন, এবং বেদড়ক মারধরের পর একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন। রাত দেড়টার দিকে শীতল ভিডিও কলে তাঁর বোন নেহাকে জানান, সুনীল তাঁকে মারধর করছেন। তারপরই বন্ধ হয়ে যায় ফোন—শুরু হয় এক নারীর নিখোঁজ হবার করুণ অধ্যায়।
পরদিন রোববার সকালে হরিয়ানা পুলিশ সোনিপাতের একটি খাল থেকে উদ্ধার করে সুনীলের গাড়ি। গাড়িটি পানিতে অর্ধডুবন্ত অবস্থায় ছিল। সুনীল নিজে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দাবি করেন, গাড়িটি খালে পড়ে গিয়েছিল এবং তিনি সাঁতরে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও শীতল ডুবে গেছেন। কিন্তু ঘটনার এমন সরল ব্যাখ্যায় পুলিশ সন্তুষ্ট হয়নি। শুরু হয় অনুসন্ধান।
সোমবার সকালে পুলিশের হাতে আসে ভয়ঙ্কর প্রমাণ—খারখোদার রিলায়েন্স খাল থেকে এক নারীর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাতে ও বুকে থাকা উল্কিচিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, মৃত নারীই হচ্ছেন মডেল শীতল চৌধুরী। মরদেহের বুক ও পেটে ছিল একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন, যেগুলো দেখে হত্যার পূর্বপরিকল্পনার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।
পরিস্থিতির চাপে অবশেষে ধরা পড়ে যান সুনীল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন—হত্যার কারণ প্রেমের সম্পর্কের অবনতি। জানা যায়, সুনীল বিবাহিত এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। এই বিষয়টি শীতল জানতে পারার পর থেকে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে। সুনীল শীতলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু শীতল তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি শীতল নিজেও ছিলেন বিবাহিত, এবং তাঁর পাঁচ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। সম্পর্কের জটিলতা, প্রতারণা, প্রত্যাখ্যান এবং ব্যক্তিগত দহন—সব মিলিয়ে এক গভীর বিক্ষোভের ফলাফলই ছিল এই ভয়াবহ হত্যা।
এখন সুনীল পুলিশের হেফাজতে এবং তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং চার্জশিট প্রস্তুত করা হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক