
২৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নাবিক দিবস। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (IMO) ২০২৫ সালের নাবিক দিবসকে ঘিরে এবছর ‘My Harassment-Free Ship’ শিরোনামে একটি বৈশ্বিক সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য সমুদ্রপথে কর্মরত সব নাবিকের জন্য নিরাপদ, বৈষম্যহীন ও হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
IMO জানিয়েছে, এই দিবসটি শুধুমাত্র নাবিকদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের একটি দিন নয়; বরং এটি একটি যৌথ আহ্বান—যার মাধ্যমে নাবিকদের প্রতি সম্মান, নিরাপত্তা এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সামুদ্রিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এবারের প্রচারণা মূলত তিনটি প্রধান লক্ষ্য সামনে রেখে পরিচালিত হচ্ছে: সমুদ্রে হয়রানির বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, শূন্য-সহনশীলতা নীতির বাস্তবায়নে শিল্প খাতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিরাপদ অভিযোগ ও সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
২০২৫ সালের প্রচারণায় প্রথমবারের মতো একটি ইন্টার্যাকটিভ ওয়ার্ল্ড ম্যাপ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পতাকাধারী রাষ্ট্রভিত্তিক নীতিমালা, সহায়তা ও অভিযোগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এর ফলে নাবিকেরা বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে সক্ষম হবেন। IMO এ উদ্যোগকে প্রযুক্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে নাবিকদের ক্ষমতায়নের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই উপলক্ষে দেওয়া বার্তায় বলেন, “নাবিকরা বিশ্ববাণিজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ তারা প্রায়ই বৈষম্য, হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। এই অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার প্রয়োজন—যা শ্রমমান বজায় রাখা ও সাগরে মানবিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে সহায়ক হবে।”
অন্যদিকে IMO-এর মহাসচিব আর্শেনিও ডমিনগেজ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, সমুদ্রকে যদি আমরা একটি বৈশ্বিক কর্মস্থল হিসেবে দেখি, তাহলে এর প্রতিটি জাহাজকে হয়রানিমুক্ত, সম্মাননির্ভর ও সহানুভূতিশীল পরিবেশে পরিণত করা জরুরি। এটি কেবল নাবিকদের মানসিক ও শারীরিক কল্যাণের জন্য নয়, বরং পুরো শিল্পখাতের স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, সমুদ্রে কর্মরত নারী নাবিকদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুরুষ নাবিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার অনেকগুলোই প্রতিবেদন হয় না, যার পেছনে রয়েছে প্রতিশোধের ভয় এবং অভিযোগ ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা। এই বাস্তবতায় এবারের প্রচারণা নাবিকদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া, প্রতিবাদ জানানোর সাহস জোগানো এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
IMO এবছর সারা বিশ্বে জনপ্রিয় সামুদ্রিক ব্লগার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ভিডিও বার্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে এসব বার্তা সরাসরি নাবিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগে শিপিং কোম্পানি, প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠান ও সরকারগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে onboard প্রশিক্ষণ জোরদার করা, নিরাপদ অভিযোগ ব্যবস্থার প্রচলন, এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে হয়রানিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য। IMO তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে পোস্টার, লোগো ও প্রচারণা সামগ্রী প্রকাশ করেছে। সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে #MyHarassmentFreeShip হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের অঙ্গীকার ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
২০১০ সালে ম্যানিলা কনভেনশনে গৃহীত একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে ২৫ জুনকে ‘নাবিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই দিনটির উদ্দেশ্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা নাবিকদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনীতি ও সমাজে অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া। দিনটি জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক দিবস।
২০২৫ সালের এই দিবসে IMO একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: সাগরকে সকলের জন্য নিরাপদ করতে হলে, প্রতিটি জাহাজে শূন্য সহনশীলতা নীতির বাস্তবায়ন, সুশাসন, এবং সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
সূত্র: আইএমও