
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যত শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়েছে। উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও হামলায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক পরিস্থিতি, যা নতুন করে বড় আকারের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে 'তীব্র হামলার' নির্দেশ দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তেহরানের শাসকগোষ্ঠীর ওপর প্রতিশোধমূলক আঘাত হানতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) কে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইডিএফ প্রধান এয়াল জামির ঘোষণা করেছেন, ইরানি শাসকদের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে ইসরায়েল শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাবে।
টাইমস অব ইসরায়েল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিহত করেছে ইসরায়েল। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় আশ্রয়কেন্দ্রে সাইরেন বাজলেও পরে আইডিএফ নিশ্চিত করে যে, ইসরায়েল এখন নিরাপদ এবং জনসাধারণ আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদুল রহিম মৌসাভি বলেন, যুদ্ধবিরতির পর আমরা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়িনি। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ইরানি বার্তা সংস্থা 'ISNA' এবং নুর নিউজ একইসাথে দাবি করেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার খবর 'মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'।
পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, "তেহরান কেঁপে উঠবে!" এর পরপরই ইসরায়েল তেহরানের বিভিন্ন স্থানে ভোরের দিকে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে রাজধানীর কিছু অংশ।
এই হামলার জবাবে ইরানও চুপ থাকেনি। ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা 'MDA' জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিরশেবা শহরে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও, বাস্তব ময়দানে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন বড় আকারের সংঘাতের স্পষ্ট ঘণ্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চরম হুমকি।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা