
শরীরচর্চার উপকারিতা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও, আধুনিক ব্যস্ত জীবনে সময়ের সংকটের কারণে অনেকেই দীর্ঘ সময়ের ব্যায়াম করতে পারেন না। তাই অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন জাগে—অল্প সময়ে যদি একই ধরনের উপকার পাওয়া যায়, তবে কোনটি হবে বেশি কার্যকর? বিশেষ করে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা এবং ১০ মিনিট দৌড়—এই দুটি বিকল্পের মধ্যে কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী?
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন জানান, যেকোনো ধরনের ব্যায়ামে উপকারের পরিমাণ নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের ওপর—ব্যক্তির ওজন, হাঁটার বা দৌড়ের গতি, কতটা সময় ব্যায়াম করা হলো এবং ব্যায়ামের সময় হৃৎপিণ্ড ও শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কতটা বাড়ল।
৩০ মিনিট ঢিমেতালে হাঁটলে যতোটা ক্যালরি পোড়ে, একই সময়ে দ্রুত হাঁটলে পোড়ে আরও বেশি ক্যালরি। অন্যদিকে, ১০ মিনিট মাঝারি গতি বা দ্রুত গতিতে দৌড়ালেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব। এ হিসেবে সময়ের দিক থেকে ১০ মিনিট দৌড় অনেক ক্ষেত্রেই ৩০ মিনিট হাঁটার সমান বা তার চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায় মাঝারি বা ভারী ব্যায়াম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম করতে হবে, যাতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখের ঝুঁকি হ্রাস পায়। দৌড় সাধারণত মাঝারি বা ভারী ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে, কারণ এতে হৃৎপিণ্ডের গতি ও শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত বাড়ে। হাঁটা তুলনামূলকভাবে হালকা ব্যায়াম হলেও, তা যদি দ্রুতগতিতে হয়, তবে মাঝারি ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট দৌড়ালে কম সময়েই ক্যালরি পোড়ানো এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকার পাওয়া যায়। তবে এ সময়টাকে মাঝারি বা ভারী ব্যায়ামের গণ্ডিতে রাখতে হলে, ওয়ার্মআপ ও কুলডাউনের সময় বাদ দিয়ে অন্তত ১০ মিনিট কার্যকর ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়া ব্যায়ামের সময় শ্বাসের গতি, ঘামের পরিমাণ এবং কথা বলার সক্ষমতা অনুযায়ী তা হালকা, মাঝারি বা ভারী—এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম হিসেবে হাঁটা অনেক সহজ এবং টেকসই অভ্যাস হলেও, দৌড় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে বেশি উপকার এনে দিতে পারে। তবে বয়স, স্বাস্থ্য অবস্থা এবং ফিটনেস বিবেচনায় ব্যক্তিভেদে ব্যায়ামের ধরন ও সময় আলাদা হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—নিয়মিত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর রুটিন বজায় রাখা।
সূত্র: ডা. তাসনোভা মাহিন, স্কয়ার হাসপাতাল