গুপ্তহত্যার আশঙ্কা

ইরানের উত্তরসূরি ঠিক করলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি

আপলোড সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১০:২৩:২১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১০:২৩:২১ পূর্বাহ্ন
ইরান-ইসরায়েল চলমান সামরিক সংঘাতের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজ বাসভবন ত্যাগ করে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইসরায়েলের সম্ভাব্য টার্গেট হয়ে ওঠায় তিনি সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছেন। দেশ পরিচালনার বিষয়ে এখন কেবল বিশ্বস্ত দূতের মাধ্যমেই সেনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি।

নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, খামেনি গোপনে একটি বিকল্প নেতৃত্ব তালিকা প্রস্তুত করেছেন যাতে যুদ্ধকালীন বা সম্ভাব্য গুপ্তহত্যার পরিস্থিতিতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বে শূন্যতা না দেখা দেয়। খামেনির ঘনিষ্ঠ তিন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে নিশ্চিত করেছেন, তিনি ইতিমধ্যে মজলিশে খোবরেগান-ই-রাহবারি অর্থাৎ নেতৃত্ব নির্ধারণকারী পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন কোনো দুর্যোগজনিত শূন্যতায় তাঁর দেওয়া নামের মধ্য থেকেই নতুন সর্বোচ্চ নেতা বেছে নেওয়া হয়।

৮৬ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ খামেনি বর্তমানে বাইত রাহবারি নামের বিশেষ সুরক্ষিত দপ্তর ও বাসভবনে সাধারণত অবস্থান করে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি সেখানে আর থাকছেন না এবং অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তাঁর ওপর ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠায় ইরান ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে খামেনি এখন কোনো মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা রেডিও ব্যবহার করছেন না। সংবেদনশীল নির্দেশনা এবং বার্তা বিনিময় হচ্ছে কেবলমাত্র একান্ত বিশ্বস্ত বার্তাবাহকের মাধ্যমে।

খবরে বলা হয়, ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল কর্তৃক চালানো হামলাকে ইরান ১৯৮০–৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ওই হামলায় রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন। তবে ইরান ধীরে ধীরে পাল্টা জবাব দিচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে।

এমন সংকটকালে ইরানে শীর্ষ নেতৃত্বে দৃশ্যমান কোনো মতবিরোধ না থাকলেও একাধিক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার নিহত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ইরানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ড্রোন ও গোপনচরবৃত্তির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, সামরিক স্থাপনা ও তেল শোধনাগারগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সামরিক কমান্ডারদের মোবাইল ফোনসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে।

ইরান সরকার মনে করছে, এই যুদ্ধ দুইটি ফ্রন্টে সংঘটিত হচ্ছে—একটি বাহ্যিকভাবে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলা, আর অন্যটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি, যেখানে ইসরায়েলি গুপ্তচরদের সহায়তায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় নাশকতা ঘটানো হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কথা স্বীকার করে পার্লামেন্টের স্পিকারের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি বলেছেন, ‘এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের শীর্ষ কমান্ডাররা নিহত হয়েছেন, যা গোয়েন্দা ত্রুটিরই প্রমাণ।’

নিরাপত্তার এই ঝুঁকি বিবেচনায় দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক ঘোষণা দিয়ে বলেছে, যেসব ব্যক্তি শত্রু রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করছেন, তারা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন, অন্যথায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

ইসরায়েল বিভিন্ন সময় তেহরানের জনবহুল এলাকাগুলো খালি করতে নির্দেশ দিয়েছে। এতে বহু বাসিন্দা শহর ছেড়েছেন। শহরের সড়কগুলো এখন প্রায় ফাঁকা। রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহন চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারি চলছে।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রবাহ সীমিত করতে ইরানে মাঝেমধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিদেশি কলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার বলছে, ইন্টারনেট এখন শত্রুদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

এই সংকটে ইরানে জাতীয় সংহতি লক্ষ্য করা গেছে। সরকারবিরোধী অধিকারকর্মী ও সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফুটবল খেলোয়াড়, শিল্পী, চিকিৎসক সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন। রাজধানী তেহরান থেকে সরে যাওয়া লোকদের আশ্রয় দিতে হোটেল ও গেস্টহাউস বিনামূল্যে খোলা রাখা হয়েছে। সামাজিক সহায়তা কার্যক্রমও ত্বরান্বিত হয়েছে।

সবশেষে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যুদ্ধ আর সহিংসতা দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না।” তবু এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করে তিনি সরকারপন্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
 
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক ও প্রকাশক : শামীম আহমেদ


অফিস :

অফিস : গুলফেশা প্লাজা (১০ম তলা), বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭

ইমেইল : info@shomoybhela.com

মোবাইল : +880 1335-149005