​রহস্যজনক মৃত্যু

বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার, পলাতক কথিত স্বামী ও সঙ্গী

আপলোড সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৬:০২:৪৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৭-০৬-২০২৫ ০৬:০২:৪৪ অপরাহ্ন
রাজধানী ঢাকার উত্তর বাড্ডার একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ। নিহত ওই নারীর নাম সুমি আক্তার, বয়স ২৭। তিনি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার বাসবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মৃত্যুর কয়েকদিন পর তার মরদেহ উদ্ধার হলেও ঘটনা ঘিরে রয়ে গেছে একাধিক প্রশ্ন, সন্দেহ আর শঙ্কার ছায়া।

পুলিশ বলছে, সুমি নামে ওই নারী উত্তর বাড্ডার সোনা মিয়া মাতুব্বর রোডের চ-১০০ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তার সঙ্গে রাসেল নামের এক ব্যক্তি স্বামী পরিচয়ে থাকলেও, তাদের মধ্যে আইনি বা ধর্মীয়ভাবে বৈধ কোনো বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাসেল পেশায় ছিলেন একটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী। ওই বাসায় প্রায় নিয়মিত আসতেন তার ভাগনে সাকিব। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও নানা বিষয়ে ঝগড়া-কলহ লেগেই থাকত।

গত রোববার রাতে বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। এরপর পুলিশ এসে সুমির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে এবং তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরদিনই অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন সুমির পরিবার।

সুমির ভগ্নিপতি মো. আরাফাত দাবি করেছেন, “রাসেল ও সাকিব নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতেন। তাদের সঙ্গে সুমির নানা বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হত। আমরা নিশ্চিত, তারাই মিলে সুমিকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর তারা দুজনেই পালিয়ে গেছে।”

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সুমির পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সীমিত। প্রায় তিন মাস আগে তিনি ঢাকায় আসেন এবং রাসেলের সঙ্গে একত্রে বসবাস শুরু করেন। ভাড়া নেওয়ার সময় তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো কাবিননামা, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র ছিল না। বাড়ির মালিকও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা ধারণা করছি, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ঘটনাটি ঘটে। সঠিক সময় ও মৃত্যুর ধরন জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। তবে প্রাথমিকভাবে এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, “রাসেল ও তার সহযোগী সাকিব পলাতক। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল কললিস্ট বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পারিপার্শ্বিক প্রমাণ ও সাক্ষ্য অনুযায়ী তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে।”

এদিকে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, ওই বাসায় প্রায়ই চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যেত। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ পুলিশে অভিযোগ করেননি। এক প্রতিবেশী জানান, “সুমি মেয়েটা খুব চুপচাপ ছিল। বাসার বাইরে খুব একটা বের হত না। কিন্তু মাঝেমধ্যে ঝগড়ার শব্দ শুনতাম। তবে এত বড় কিছু ঘটবে ভাবিনি।”
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাড়ির মালিক ও আশপাশের বাসিন্দারা পুলিশের তদন্তে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারলে শুধু সুমির পরিবার নয়, পুরো সমাজের মধ্যে অপরাধের বিচারহীনতার শঙ্কা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এ ধরনের ‘কথিত সম্পর্কের’ ছত্রছায়ায় অপরাধ ঢেকে ফেলার প্রবণতা সমাজে বিপজ্জনক বার্তা দেয়।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তদন্তে অগ্রগতি আনতে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও সিআইডির বিশেষ ইউনিটও মাঠে নামানো হতে পারে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দাখিল এবং বিচারিক কার্যক্রম শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক ও প্রকাশক : শামীম আহমেদ


অফিস :

অফিস : গুলফেশা প্লাজা (১০ম তলা), বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭

ইমেইল : info@shomoybhela.com

মোবাইল : +880 1335-149005