প্রাচীন বৈরিতা থেকে সরাসরি সংঘাতে

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য, বিশ্বনেতারা উদ্বিগ্ন

আপলোড সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৬:১১:০২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৬:১১:০২ অপরাহ্ন
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভূরাজনৈতিক বৈরিতা হঠাৎ করেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দু’দেশেরই সামরিক অভিযানে জড়িয়ে পড়েছে, যেখানে লক্ষ্যবস্তু হয়েছে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, সেনাঘাঁটি ও শহুরে এলাকা। দ্বন্দ্ব এখন আর সীমিত নয় — তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার সীমানা পেরিয়ে গিয়েছে।


গত সপ্তাহে ইসরায়েল মধ্যরাতে গোপনে অভিযান চালায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘাঁটি। ইসফাহান ও কেরমানশাহ শহরের উপকণ্ঠে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। নিহত হয়েছেন একাধিক সামরিক কর্মকর্তা ও গবেষক। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।


এই হামলার জবাবে ইরান চালায় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’। এক রাতেই ২০০টির বেশি ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। আঘাত হানে তেল আবিব, হাইফা এবং গাজা সীমান্ত এলাকায়। যদিও ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে, তবুও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টেলিফোন আলোচনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র—তিন দেশের নেতারাও পরিস্থিতির গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে বলেছেন। রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই উত্তেজনা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।


এই লড়াই শুধু গোলাবারুদের নয়, প্রযুক্তিরও। ইসরায়েল ‘ডীপ স্ট্রাইক ড্রোন’ দিয়ে অত্যাধুনিক হামলা চালিয়েছে। ইরানও তাদের সর্বশেষ ‘বাসার থ্রি’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ১২০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত ভবিষ্যতের যুদ্ধের প্রযুক্তিগত রূপরেখা আঁকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।


দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন আজ এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। ইরানের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে আহতদের ভিড়, ইসরায়েলে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই না পেয়ে রাস্তায় রাত কাটাতে হচ্ছে বহু পরিবারের। খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।


এই সংঘাত আসলে বড় কোনো যুদ্ধের শুরু না তো? একদিকে সামরিক প্রতিক্রিয়া, অন্যদিকে কূটনৈতিক চাপ — দুই পথেই দ্বন্দ্ব বেড়ে চলেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে নাকি মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আরও বারুদ ছড়িয়ে পড়বে — এখন সে প্রশ্নই সামনে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক ও প্রকাশক : শামীম আহমেদ


অফিস :

অফিস : গুলফেশা প্লাজা (১০ম তলা), বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭

ইমেইল : info@shomoybhela.com

মোবাইল : +880 1335-149005