বাংলাদেশে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ: স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত?

আপলোড সময় : ১১-০৬-২০২৫ ০৪:৩১:৪৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১১-০৬-২০২৫ ০৪:৩৬:২২ অপরাহ্ন
বাংলাদেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিশেষ করে এপ্রিলের শেষ দিকে মাত্র একজন রোগী শনাক্ত হলেও মে মাসের শেষ সপ্তাহে তা দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ‘এক্সএফজি’ এবং ‘এক্সএফসি’ নামে করোনার দুটি নতুন উপধরন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো ওমিক্রনের JN-1 ভ্যারিয়েন্ট থেকে উদ্ভূত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক বলে মনে করছেন গবেষকেরা। ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোতেও এই ধরন শনাক্ত হওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।



স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালগুলোতে আবারও নমুনা সংগ্রহ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আপাতত শুধুমাত্র যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে RT-PCR ল্যাব রয়েছে, সেখানেই সীমিত আকারে পরীক্ষা শুরু হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় শহরগুলোতে এই কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে চালু হবে। লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।


স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে পরীক্ষার কিটের ঘাটতি। রাজধানীর প্রধান তিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী, সলিমুল্লাহ) বর্তমানে কোনো করোনা টেস্ট কিট নেই। এতে রোগ শনাক্ত ও বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ রোধে শুধু পরীক্ষা নয়, একইসঙ্গে টিকা কার্যক্রম আবারও শুরু করা জরুরি। কিন্তু টিকার মজুতও সীমিত বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।


করোনার প্রতিটি ঢেউয়ের সময় জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এবারের ঢেউয়ের আগে জনগণের মধ্যে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা একেবারেই কমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারকে এখনই মিডিয়া, স্কুল, অফিস ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করা উচিত।


​​​​​ করোনার নতুন ধরনগুলো দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। তাই শুধু পরীক্ষার আওতা বাড়ানো নয়, টিকা কর্মসূচি পুনরায় চালু করা, হাসপাতালে কিট সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং হেলথওয়ার্কারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নজরদারি বাড়ানো ও বিদেশফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করা এখন সময়ের দাবি।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনা মহামারিকে গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে না রাখলেও প্রতিটি দেশকে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশকেও একই রকম প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে আগের মতো সংকট দেখা না দেয়।


করোনার সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ভয়াবহ নয়, কিন্তু অবহেলা করলে তা দ্রুত সংকটের দিকে যেতে পারে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জনসচেতনতা, সরকারি নীতিনির্ধারণ এবং গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই আগামী দিনের করোনা ঢেউ ঠেকানো সম্ভব।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক ও প্রকাশক : শামীম আহমেদ


অফিস :

অফিস : গুলফেশা প্লাজা (১০ম তলা), বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭

ইমেইল : info@shomoybhela.com

মোবাইল : +880 1335-149005